AllBanglaNews24

প্রকাশিত: ১৬:০৪, ২৮ জানুয়ারি ২০২০
আপডেট: ০০:৩৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

হিমোগ্লোবিন কি? হিমোগ্লোবিনের কাজ কি? হিমোগ্লোবিনের অভাবে কী হয়?

হিমোগ্লোবিন কি? হিমোগ্লোবিনের কাজ কি? হিমোগ্লোবিনের অভাবে কী হয়?

হিমোগ্লোবিন শব্দটির সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই কম বেশি পরিচিত। এমনকি, এ শব্দটি মাথায় আসলেই আমাদের রক্তের কথা মনে পড়ে। কারণ, আমরা জানি এ শব্দটি রক্তের সঙ্গে সম্পর্কিত। মানুষসহ মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী সকল প্রাণীর রক্তেই হিমোগ্লোবিন থাকে যা অক্সিজেন পরিচালনাসহ শরীরের আরও অন্যান্য কার্যাবলী সম্পন্ন করে থাকে।
আসুন আজ হিমোগ্লোবিন সম্পর্কে বিস্তারিত জানি। এটি কি, কিভাবে আমাদের দেহে কাজ করে, এর রেঞ্জ কত, ইত্যাদি সব বিষয়েই সম্যক ধারণা নিয়ে রাখি।

হিমোগ্লোবিন কি?

হিমোগ্লোবিন আমাদের শরীরের একটি প্রয়োজনীয় প্রোটিন, মেডিকেল সায়েন্সের ভাষায় একে মেটালোপ্রোটিনও বলা হয়ে থাকে। এটি আমাদের রক্তের লোহিত কণিকায় থাকে এবং রক্তের মাঝে প্রয়োজনীয় ঘনত্ব বজায় রাখে। হিমোগ্লোবিনের জন্যে রক্ত যেমন ঘন হয়, তেমনি লালও হয়। রক্তের অন্যান্য উপাদান সচরাচর বর্ণহীন হয়ে থাকে, হিমোগ্লোবিনই রক্তকে লাল করে থাকে।
হিমোগ্লোবিন আমাদের দেহে দুই ধরণের প্রোটিন গঠনে ভূমিকা রাখে বলে জানিয়েছে মেডিকেল সায়েন্স। এর একটি হচ্ছে টারশিয়ারী আর অন্যটি হচ্ছে কোয়াটার্নারী। উভয় ধরণের প্রোটিনই শরীরের জন্যে দরকারি। আর এসব প্রোটিনের স্থায়িত্ব প্রদান করার জন্যে হিমোগ্লোবিন রক্তের মাঝে আলফা হেলিক্স নামের এক ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড উৎপন্ন করে থাকে।

হিমোগ্লোবিনের কাজ কি?

আমরা আগেই জেনেছি হিমোগ্লোবিন বর্ণহীন রক্তকে লাল করে থাকে। সেই সাথে রক্তে থাকা নানা রকম উপাদানের পর্যাপ্ততাও নিশ্চিত করে থাকে। তবে হিমোগ্লোবিনের মূল কাজ শরীরে অক্সিজেন পরিবহণ করা। এটি মানুষের শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে যেসব সমস্যা হয় তার মাঝে প্রধাণতম বিষয়টি হচ্ছে অক্সিজেন স্বল্পতা।
আমরা যখন বাতাস থেকে নিশ্বাসের সঙ্গে অক্সিজেন গ্রহণ করি, তখন এটি প্রথমে আমাদের ফুসফুসে যায়। আর ফুসফুস থেকে এই অক্সিজেন শরীরের প্রতিটি টিস্যুতে, প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে পরিবহণের দায়িত্বটি পালন করে হিমোগ্লোবিন।
শুধু তাই নয়, এই হিমোগ্লোবিনই অক্সিজেনের সাথে কার্বণ ডাই অক্সাইড বিনিময় করে। অর্থাৎ, ফুসফুস থেকে অক্সিজেন নিয়ে শরীরে পাঠায় আর শরীর থেকে বিষাক্ত কার্বণ ডাই অক্সাইড নিয়ে ফুসফুসে পাঠিয়ে দেয়। অতপর ফুসফুস সেটাকে আমাদের নিশ্বাস ফেলার মাধ্যমে বাইরে পাঠিয়ে দেয়।
সুতরাং, আমরা বুঝতে পারছি যে আমাদের রক্তের অক্সিজেন সরবরাহের সঙ্গে হিমোগ্লোবিনের সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই, রক্তে যদি কখনো এই লোহিত অনু ধারণকারী পদার্থটি কমে যায়, তবে শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। আর তখন আমরা অ্যানিমিয়াসহ নানা রকম শারীরিক সমস্যার সন্মুখীন হই।
রক্তে কোনও দূষিত পদার্থ দেখা দিলে হিমোগ্লোবিন সেটাকে পরিস্কার করে অর্থাৎ রক্তে যে কোন ধরণের ক্ষতিকর পদার্থ মিশ্রণে বাধা প্রদান করে। এমনকি, আমাদের শরীরে যত ধরণের বিষাক্ত গ্যাস জমা হয়, হিমোগ্লোবিন সেগুলোকে শরীরের বাইরে পরিবহণেও সহযোগীতা করে থাকে।
মানুষের দেহের রক্ত কণিকার ৯৬ থেকে ৯৭ ভাগই হয়ে থাকে হিমোগ্লোবিনের প্রোটিন অংশ। আর রক্তের মোট ওজনের (পানিসহ) ৩৫ ভাগই দখল করে থাকে এই হিমোগ্লোবিন। আমাদের শরীরে থাকা প্রতি ১ গ্রাম হিমোগ্লোবিন বাতাস থেকে প্রতিবার ১.৩৬ মিলিলিটার, কখনো কখনো তার চেয়ে কিছুটা বেশি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। যারফলে, শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ, বিশেষ করে রক্তে এর পরিবহণের মাত্রা প্রায় ৭০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে থাকে।
আমাদের শরীরের ৯৭ ভাগ অক্সিজেন ফুসফুস থেকে হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে শরীরের নানা অংশে সরবরাহ হয়ে থাকে। যে ৩ ভাগ বাকী থাকে, তা রক্তের প্লাজমায় মিশে যায়। হিমোগ্লোবিন রক্তের মধ্যে কমপক্ষে ৩০ থেকে উর্ধ্বে ১০০ বার পর্যন্ত অক্সিজেন মুভ করাতে পারে।
ফুসফুসের যেখানে অক্সিজেনের লেবেল অত্যন্ত বেশি থাকে, হিমোগ্লোবিন খুব সুন্দরভাবে সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক করে দেয়। অর্থাৎ, যে স্থানে অক্সিজেন বেশি সেখান থেকে বাড়তি অক্সিজেন নিয়ে যেখানে কম সেখানে পৌঁছে দেয়। হিমোগ্লোবিনের প্রতিটি অনুর ৪টি আয়রণ পরমাণু থাকে। আর প্রতিটি আয়রণ পরমাণু একটি করে অক্সিজেন গ্রহণ করে।

হিমোগ্লোবিনের অভাবে কী হয়?

আমরা উপরের আলোচনা থেকে যা বুঝলাম, হিমোগ্লোবিন হলো এক ধরনের প্রোটিন। এটি মানুষের শরীরে লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে থাকে। এটা আমাদের শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সাহায্য করে। মানুষের শরীরের ভেতর প্রতিটি জায়গায় অক্সিজেন পৌঁছে দেয়ার কাজ হলো হিমোগ্লোবিনের। রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে অক্সিজেন সরবরাহও কমে যায়।
রক্তশূন্যতা
আমাদের শরীরে রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লোহিত রক্তকণিকা, আর লোহিত রক্তকণিকার প্রাণ হচ্ছে হিমোগ্লোবিন। এই হিমোগ্লোবিনের কাজ হলো ফুসফুস থেকে দেহকোষে অক্সিজেন পরিবহন করা। আবার আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। কোনো কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বা পরিমাণ কমে গেলে সেই অবস্থাকে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলা হয়।
হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা
বয়স ও লিঙ্গ অনুসারে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ভিন্ন। সাধারণত জন্মের সময় নবজাতকের দেহে এক লিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ থাকে ২০০ গ্রাম। পরবর্তীকালে তিন মাস বয়স থেকে তা কমতে থাকে এবং প্রায় অর্ধেক হয়ে যায়। পরে প্রাপ্ত বয়সের সময় হিমোগ্লোবিন আবার বাড়তে শুরু করে। পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রতি লিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের স্বাভাবিক মাত্রা ১৩০ থেক ১৮০ গ্রাম। নারীদের ক্ষেত্রে ১১৫ থেকে ১৬৫ গ্রাম। এ ক্ষেত্রে পুরুষ কিংবা নারীর প্রতি লিটার রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান ৭০ কিংবা ৮০ গ্রাম হলে তাকে রক্তশূন্যতা বলা চলে।
লক্ষণ
বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রেই অ্যানিমিয়ার নির্দিষ্ট লক্ষণ শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তবে এ ক্ষেত্রে বেশকিছু লক্ষণ প্রায় একই সঙ্গে থাকলে রক্ত পরীক্ষা করা খুবই জরুরি। যেমন-
•    শরীর ফ্যাকাসে থাকবে ও প্রচুর ঘাম হবে।
•    বুক ধড়পড় করবে।
•    নাড়ির স্পন্দন দ্রুত হবে।
•    মাথা ঘোরার সঙ্গে মাথা ব্যথাও থাকতে পারে।
•    চোখে ঝাপসা কিংবা কম দেখবে।
•    মুখের কোণে ও জিহ্বায় ঘা হতে পারে।
•    দুর্বলতা ও ক্লান্তিভাব। হজমে সমস্যা এবং পুরো শরীর ফুলে যায়।
•    পা ফুলে যাওয়া সঙ্গে শ্বাসকষ্টও থাকতে পারে।
•    অনিদ্রা কিংবা ঘুম কম হতে পারে। হৃৎপিন্ড বড় হয়ে যায় এবং দ্রুত হার্টবিট হতে থাকে।

চিকিৎসা

রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়াতে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন ও ফলেটযুক্ত খাদ্য ও ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে সমস্যা বেশি হলে যথাযথ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
 

অল বাংলানিউজ ২৪

শেয়ার করুন

Advertising
allbanglanewspaper-link

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়

    Add