শিক্ষিত আর স্বাবলম্বী নারীদের জন্যই কি সংসার ভাঙছে!

ফারজানা আক্তার

allbanglanews24.com

প্রকাশিত : ০২:০৩ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০২০ রোববার | আপডেট: ১১:৩৯ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার

ছবি: ফারজানা আক্তার

ছবি: ফারজানা আক্তার

ডিভোর্স করবে বলে কেউ বিয়ে করে না। স্বামী, সন্তান / স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সুন্দর সাজানো একটি সংসার করার স্বপ্ন নিয়ে সবাই বিয়ে করে। কিন্তু অনেক সময় সংসার টিকে না। 

কেন সংসার টিকে না ? এই একটি মাত্র প্রশ্নের অনেক ধরণের উত্তর রয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন সমস্যা। সমস্যা কার জীবনে থাকে না? প্রতিটি সমস্যার সমাধানও থাকে। 

কিন্তু বর্তমানে মানুষ সমস্যার সমাধান করতে ইচ্ছুক নয়। সমস্যার সমাধানকে তারা সময় নষ্ট মনে করে। এক সমস্যার সমাধান না করে তারা নতুন সমস্যা সৃষ্টি করতে পটু। 

সংসার জীবনে ঝামেলা থাকবে। মান - অভিমান থাকবে, ঝগড়া - বিবাদ, টানাপোড়ন থাকবে। দিনশেষে আবার সবাই মিলেমিশে এক হয়ে যাবে। যে সংসারে কম্প্রোমাইজ নেই, স্যাক্রিফাইজ নেই, নিজস্ব স্পেস নেই সেই সংসারে দিনশেষে সুখ আসে না। বিষাদই থাকে। 

বর্তমানে ডিভোর্স খুব বেশি হচ্ছে। তার কারণ হিসেবে বেশিরভাগ মানুষ মনে করছে মেয়েদের অতিরিক্ত শিক্ষিত হওয়া, স্বাবলম্বী হওয়া। 

স্বাবলম্বী মেয়েরা সংসারে  কম্প্রোমাইজ, স্যাক্রিফাইজ করতে চায় না। তাই উনিশ থেকে বিশ হলে তারা ভাঙ্গনের দিকে চলে যায়। 

একটি জাতি যতবেশি শিক্ষিত হবে, তারা ততবেশি আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণ হবে। 

ঘরে ফিরে আপনি আপনার বউকে 'সারাদিন কী করো! এটাও করো নি! ঐটাও শিখো নি! এটাও জানো না! ওর বউ এমন! তার বউ তেমন!' ইত্যাদি যখন বলেন তখন তার মানসিক অবস্থা কেমন হয় সেটা বুঝতে পারেন ?

একজন শিক্ষিত এবং স্বাবলম্বী মেয়ে এই কথাগুলো একদিন হজম করে, দুইদিন হজম করে, তৃতীয়দিন ঘুরে দাঁড়াতে চায়। তার ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আপনি যখন আবার হাসি ঠাট্টা করে তখন সে একদিন সহ্য করে, দুইদিন সহ্য করে, তৃতীয় দিন আপনার থেকে মুক্তি চাইবে। 

বর্তমানে পরকীয়াও ডিভোর্সের অন্যতম বড় একটি কারণ। পরকীয়ার সাথে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, গৃহিনী, চাকরিজীবী, ছেলে - মেয়ে উভয়েই কমবেশি যুক্ত। এটা ভিন্ন টপিক্স। 

আমার এই লেখাটা  শিক্ষিত এবং  স্বাবলম্বী মেয়েদের ডিভোর্স চাওয়ার পিছনের গল্পটা তুলে ধরার বিন্দু পরিমান চেষ্টা মাত্র। 

রান্নাবান্না একটা আর্ট। সংসার করা প্রতিটি মেয়ের স্বপ্ন। নিজের সংসারের সদস্যের নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে প্রতিটা মেয়েই চায়। 

যে মেয়েটা ৯-৫টার অফিস সামলায় সেও ঘরে ফিরে সন্ধ্যার নাস্তায় টুকিটাকি বানিয়ে ফেলে। এতে তার ক্লান্তি থাকে না, বরং প্রশান্তি আসে। 

ক্লান্তি কখন আসে জানেন ? যখন আপনি তার সেই কাজে খুঁত বের করেন। চায়ে চিনি কম হলো কেন! চায়ে চিনি বেশি হলো কেন! নুডুলসটা বেশি সিদ্ধ হলো কেন! তরকারিতে লবণ কম হলো কেন! লাঞ্চ বাক্স রেডি করতে দেরি হলো কেন ইত্যাদি। 

একজন মানুষ সকল কাজে পারদর্শী হয় না। যে মেয়েটা মেডিকেলের কঠিন কঠিন বই পড়ে শেষ করে ফেলে, সেই মেয়েটা যদি মুরগি কাটতে না পারে সেটা কি খুব বেশি অন্যায়? 

তাকে কেন উঠতে বসতে মুরগি কাটার জন্য কথা শুনতে হয়। শুরুতে না হয় সে কথা শুনলো, মেনেও নিলো। কিন্তু সেটা কতদিন ? দিন শেষে সবাই তো মানুষ। সবারই ধৈর্যশক্তির লিমিটেশন আছে। 

এই সমাজে পুরুষেরা সবসময় প্রায়োরিটি পেয়ে এসেছে। তাদেরকে সমাজের, পরিবারের শাসক মানা হয়। পুরুষেরা ভয় পায় মেয়েরা যদি তাদের সেই শাসকের জায়গাটা নিয়ে নেয়। 

এই ভয় থেকে তারা হিংস্র হয়ে উঠে। পথ চলায় পুরুষের যখন নারীর সহযোগী হওয়া উচিত, তখন সেই পুরুষ হয়ে উঠে প্রতিযোগী। প্রতিযোগীকে যতবেশি দমিয়ে রাখা যায়, অপমান করা যায় ততই ভালো। বেশিরভাগ পুরুষেরা এই কাজটাই করে। 

একজন যোগ্যতাসম্পূর্ন এবং আত্মসম্মানবোধসম্পূর্ণ নারী কখনোই নারীকে প্রতিযোগী ভাবা পুরুষের সাথে বসবাস করতে পারবে না। আমাদের সমাজের বেশিরভাগ পুরুষ নারীকে প্রতিযোগী ভাবে। নিজের বোন, বউকেও প্রতিযোগী ভাবে। বউকে তো একটু বেশিই প্রতিযোগী মনে করে। 

সেই তুলনায় একদিকে ডিভোর্সের সংখ্যা কিন্তু কমই আছে। কারণ নারীরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে সংসার টিকানোর। হাতে গোনা দুই একটা ব্যতিক্রমী ঘটনা আছে। সেটা সকল ক্ষেত্রেই থাকে। 

ফেসবুকে নারীদের নিয়ে বিশেষ করে নারীবাদ নিয়ে প্রচুর ট্রল হয়। কোন মেয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছে শুনলে তো! সে যদি আবার সেলেব্রিটি হয় তাহলে কথা নেই।  কথায় কথায় তথাকথিত নারীবাদীদের উদাহরণ দেয়।

 দুই চারজন তথাকথিত নারীবাদী হয়ে সংসার করছে না। আপনারা এই ব্যাপারটা নিয়ে এতো নাচানাচি করেন। আর, যারা দিনের পর দিন মানসিক অত্যাচার সহ্য করে এক প্রকার লড়াই করে সংসার করছে, অনেকে সংসারও করছে , ছেলে মানুষ মানুষ করছে আবার সাথে অন্য কোন পেশার সাথেও যুক্ত আছে। 

আপনাদের আশেপাশে এমন কোন গল্প নেই? সেগুলো ফেসবুকে তুলে আনতে পারেন না ? সেগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন না? 

কাউকে তথাকথিত নারীবাদীদের সাথে তুলনা করে ছোট করার থেকে, কোন সাহসী নারীর গল্প শুনিয়ে তাকে উৎসাহিত করতে পারেন না ? অন্য নারীর কথা ছাড়ুন। নিজের মাকে দেখুন।  তার গল্পটা শুনাতে পারেন না ?

সত্যি কথা কি জানেন? আপনিও না নারীদের প্রতিযোগী ভাবেন। এই জন্য তাকে সাহস দেওয়ার বদলে তাকে অপমান করে কথা বলেন। তাকে পজেটিভ কোন গল্প না শুনিয়ে, তথাকথিত নারীবাদীদের গল্প শোনান। তাকে দুর্বল করে দিতে চান। তার মনোবল ভাঙ্গতে চান। 

শুনেন সমাজ, সংসার প্রতিযোগিতার জায়গা নয়। এখানে একে অপরের সহযোগী হয়ে সুন্দর সমাজ আর সংসার সাজানোর জায়গা। আপনারা যেই প্রতিযোগিতার পথে হাঁটছেন, এই পথে যদি হাঁটতে থাকেন তাহলে আপনাদের অভিনন্দন। নিজের হাতে নিজের মেয়ের জন্য দোজখ বানানোর জন্য।

লেখাটি ফারজানা আক্তারের ফেসবুক থেকে নেওয়া হয়েছে। লেখাটি একান্তই লেখকের নিজস্ব মতামত।