শাওয়াল মাসের ছয় রোজার ফজিলত

allbanglanews24.com

প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ৩০ মে ২০২০ শনিবার

ছবি- সংগৃহীত

ছবি- সংগৃহীত

মাহে রমজানে এক মাস সিয়াম সাধনা ও দীর্ঘ অধ্যবসায়-অনুশীলনের পর মানুষের জীবনে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে। এই চমৎকার পরিবর্তন যেন জীবনে অব্যাহত থাকে এবং এক মাসের রোজা শেষে বান্দা যেন রোজার কথা ভুলে না যায়; সে জন্য প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩ থেকে ১৫ তারিখের রোজা, আশুরার রোজা, ৯ জিলহজ আরাফার দিনের রোজাসহ অন্যান্য নফল রোজার বিধান রেখেছে ইসলাম।

ফরজ নামাজের কমতিগুলো পোষাতে যেমন নফল নামাজ রয়েছে, তেমনি ফরজ রোজার পরও শাওয়ালের সুন্নত রোজা রয়েছে। এই নফলগুলো ফরজের ত্রুটিগুলোর পূরণের জন্য। রোজাদার যদি মিথ্যা, অনর্থক বাক্যালাপ, অসদাচরণ ও মন্দ দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি কাজ থেকে সম্পূর্ণ বাঁচতে না পারে, তাহলে তার রোজার পুণ্য কমে যায়। আর কমতি পুণ্যকে পূর্ণ করতেই শাওয়ালের ছয়টি রোজা।

রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায়

শাওয়ালের ছয়টি রোজার মাধ্যমে রমজানের রোজার শুকরিয়া আদায় করা হয়। যখন কোনো বান্দার আমল আল্লাহতায়ালা কবুল করেন, তখন তাকে অন্য নেক আমলের তাওফিক দেন। সুতরাং এ রোজাগুলো রাখতে পারা রমজানের রোজা কবুল হওয়ারও লক্ষণ। রাসুল (সা.) নিজে এ রোজা রাখতেন এবং সাহাবায়ে কেরামদের রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন। আবু আইয়ুব আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল।’ (মুসলিম ২/৮২২)

সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব

রমজানের ৩০টি রোজার সঙ্গে শাওয়ালের ছয়টি রোজা যুক্ত হলে মোট রোজার সংখ্যা হয় ৩৬টি। আর প্রতিটি পুণ্যের জন্য ১০ গুণ পুরস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে কোরআনুল কারিমে। তাহলে ৩৬টি রোজার ১০ গুণ হলে ৩৬০টি রোজার সমান (এটি পুরস্কারের দিক থেকে)। অর্থাৎ সারা বছর রোজার সমান সাওয়াব হবে। সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘রমজানের রোজা ১০ মাসের রোজার সমতুল্য আর (শাওয়ালের) ছয় রোজা দুই মাসের রোজার সমান। সুতরাং এ হলো এক বছরের রোজা।’ (নাসায়ি : ২/১৬২)

সুরা আনআমের ১৬০ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজ করল, সে ১০ গুণ সওয়াব পাবে। এ হিসাবে যে ব্যক্তি রমজানের এক মাস রোজা রাখল, সে ১০ মাস রোজা রাখার সওয়াব পাবে। আর ছয়টি রোজার ১০ গুণ ৬০ দিন। অর্থাৎ দুই মাস। আর এ দুই মাস মিলে ১২ মাস রোজার সাওয়াব। উবাইদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসুল, আমি কি সারা বছর রোজা রাখতে পারব?’ তখন রাসুল (সা.) বললেন, ‘তোমার ওপর তোমার পরিবারের হক রয়েছে। কাজেই তুমি সারা বছর রোজা না রেখে রমজানের রোজা রাখো এবং রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখো, তাতেই সারা বছর রোজা রাখার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি : ১/১৫৭)

ছয় রোজার ব্যাপারে ভুল ধারণা

শাওয়ালের ছয়টি রোজার ব্যাপারে কিছু ভুল ধারণা সমাজে প্রচলিত। অনেকের ধারণা, এ রোজা শুধু মহিলারা রাখবে। প্রকৃতপক্ষে তা নয়; বরং এ রোজা পুরুষ-মহিলা সবার জন্যই সুন্নত। মাসের শুরু-শেষ কিংবা মাঝামাঝি সব সময়ই রাখা যায় এ রোজাগুলো। একনাগাড়ে অথবা মাঝে ফাঁক রেখে পৃথকভাবেও রাখা যায়। শাওয়াল মাসে শুরু করে শাওয়াল মাসে শেষ করলেই হবে। তবে ঈদুল ফিতরের পর শাওয়ালের প্রথম দিকে একসঙ্গে ছয়টি রোজা রাখাই উত্তম।

প্রসঙ্গত, অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যেকোনো কারণে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে শাওয়াল মাসে কাজা রোজা আগে রাখবে, নাকি ছয় রোজা আগে রাখবে। আবার এই রোজা রাখলেই কি কাজা রোজা আদায় হয়ে যাবে, নাকি আলাদা আলাদা রাখতে হবে। এর জবাব হলো, কাজা রোজা আদায় করা যেহেতু ফরজ, তাই আগে কাজা রোজা আদায় করতে হবে। আর ফরজের কাজার সঙ্গে যেহেতু নফলের নিয়ত করা যায় না, তাই কাজা রোজা ও ছয় রোজা আলাদা আলাদা-ই রাখতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত : ৫/৪৭৬)