বৈশাখের জনপ্রিয় পাঁচ গানের গল্প

allbanglanews24.com

প্রকাশিত : ০৭:২৯ পিএম, ১৪ এপ্রিল ২০২০ মঙ্গলবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাঙালি জাতির জীবনে বাংলা নববর্ষের প্রথম এই দিনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ঈদ ও পূজার মতো বাংলা নববর্ষও যেন আনন্দ-উৎসবের এক অন্যতম দিনে পরিণত হয়েছে। বৈশাখ এলেই প্রতিবছরই নতুন নতুন গান প্রকাশ হলেও এবারের চিত্র একবারেই ভিন্ন। করোনাভাইরাসের কারণে এবারের বৈশাখ থমকে গেছে। তবে কিছু কিছু গান আছে যা কখনোই নতুনের ভীড়ে হারিয়ে যায় না। বৈশাখের জনপ্রিয় তেমনি পাঁচটি গানের পেছনের গল্পই তুলে ধরা হলো-

মেলায় যাইরে, কণ্ঠ: ফিডব্যাক, কথা: মাকসুদুল হক, সুর ও সঙ্গীত: ফিডব্যাক

ফোয়াদ নাসের বাবু: ১৯৮৯ সালের শেষ দিক। যথারীতি নতুন গান নিয়ে বসি ব্যান্ডের সবাই। শুরুতে মাকসুদ গানটির ভাবনা শেয়ার করে। কি-বোর্ড বাজিয়ে আমি একটা সুর করি, তার ওপর রিদমে পিয়ারু ভাই এবং গিটারে লাবু রহমান। সুর এবং সঙ্গীতটা দাঁড়িয়ে গেলে বাকি অন্তরা লেখা হয়। তখনই গানটি সবার পছন্দ হয়। ফলে রেকর্ডিংয়ের আগেই কয়েকটি অনুষ্ঠানে আমরা গানটি করি। ১৯৯০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের সময় বিটিভি ফিলার সং হিসেবে গানটি চালানো শুরু করে। এরপর দ্রুত সারাদেশে ছড়িয়ে যায়। ‘মেলা’ অ্যালবাম প্রকাশের পর গানটির জনপ্রিয়তা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। এখন তো বাঙালির উৎসব বলতেই এই গান।

রমনার বটমূলে, কণ্ঠ: আসিফ, কথা: কবির বকুল, সুর ও সঙ্গীত: রাজেশ

রাজেশ: ২০০৬ সাল, মাত্রই বকুল ভাইয়ের স্ত্রী দিনাত জাহান মুন্নীর জন্য বৈশাখ নিয়ে একটি গান করি। সেই সময় আসিফ ভাইয়ের ‘অভিনয়’ অ্যালবামের কাজ হচ্ছিল বৈশাখকে সামনে রেখেই। হঠাৎ মনে হলো বৈশাখ নিয়ে একটি গান করলে মন্দ হয় না। বকুল ভাইকে বলি যে বৈশাখ নিয়ে আমাদের এই গানটি তো ভালোই হয়েছে। চলেন আসিফ ভাইয়ের জন্য একটা করি। প্রায় আধা ঘণ্টার মধ্যেই গানটি তৈরি হয়ে যায়। মুখের সুরটা প্রথমবার শুনেই বকুল ভাই বলেন, ‘এটাই ওকে’। আসিফ ভাই কণ্ঠ দেয়ার পর শুনে আমরা তো অবাক! এতো ভালো হবে ভাবিনি। প্রতিবার পহেলা বৈশাখ এলেই মনে হয়, বৈশাখ নিয়ে আমারও তো একটা গান আছে।

বাজেরে বাজে ঢোল আর ঢাক, কণ্ঠ: সোনিয়া, কথা: কবির বকুল,  সুর ও সঙ্গীত: শওকত আলী ইমন

শওকত আলী ইমন: ২০০৬ সাল, আমি আর বকুল সোনিয়ার অ্যালবাম ‘বিষের বাঁশি’ করছিলাম। ১৫ দিনেই পুরো অ্যালবামের কাজ শেষ। এর মধ্যে এ গানটিও ছিল প্রেমের গান হিসেবে। হঠাৎ মনে হলো প্রেমের কথা বাদ দিয়ে বৈশাখ নিয়ে করলে ভালো হবে। বকুল বলল, ‘পহেলা বৈশাখ নিয়ে হলে তো বছরে মাত্র একদিন বাজবে।’ পরে দুজনে সিদ্ধান্ত নিই বৈশাখ নিয়ে গান করার। সোনিয়া গেয়েছেও দরদ দিয়ে। অ্যালবাম বের হওয়ার পর মোটামুটি রেসপন্স পাই। পরের বছর দেখি ডাবল রেসপন্স। এরপর প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ ভোরে ঘুম ভাঙতেই আমার বাসার ছাদ থেকে গানটি শুনতে পাই!

ঢোল বাজে ঢোল বাজে বাংলাদেশের ঢোল, কণ্ঠ: মেহরীন, কথা, সুর ও সঙ্গীত: বাসু

বাসু: বছর পাঁচেক আগে মেহরীন আমাকে একটি গান করতে বলেন। ভাবনায় পড়ে যাই তার জন্য কী ধরনের গান করব। সে তো পপ গানই গায়। সিদ্ধান্ত নিই এমন একটি গান করব যেটা একেবারেই বাংলা। যে গানে একেবারে আলাদা করা যাবে মেহরীনকে। তারপর এই গানটি লিখি এবং সুর করি। পিওর সাউন্ড স্টুডিওতে করি রেকর্ডিং। পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন টিভি অনুষ্ঠান এবং বৈশাখের অনুষ্ঠানে গানটি বাজতে শুনেছি অনেক। আমার মনে হচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গানটি টিকে যাবে।

এলো বৈশাখ বৈশাখ, কণ্ঠ: বালাম ও জুলি কথা: টি আই অন্তর, সুর ও সঙ্গীত: বালাম

বালাম: ২০০৮ সাল, আমার ‘বালাম’ অ্যালবামটি শ্রোতারা গ্রহণ করার পর জুলিকে নিয়ে ‘বালাম ফিচারিং জুলি’র কাজ করছিলাম। অ্যালবামটি প্রকাশের সময় নির্ধারণ করা হয় পহেলা বৈশাখ। তখন কয়েকটি গান হয়ে গেছে। বেশির ভাগ গানই সুরের ওপর লিখেছিলেন টি আই অন্তর। তাকে বললাম, ‘দেখেন তো বৈশাখ নিয়ে একটা গান লিখতে পারেন কি না।’ তিনি লিখে নিয়ে এলেন। খুব সহজ একটা সুরের ওপর গানটি তৈরি করি, যাতে সবাই গাইতে পারে। ভয়েস দেয়ার পরই মনে হচ্ছিল গানটি সবার ভালো লাগবে। সেটাই হয়েছে।