বিল গেটসের দৃষ্টিতে করোনাভাইরাস থেকে আমাদের শিক্ষা

allbanglanews24.com

প্রকাশিত : ০৪:২২ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২০ সোমবার | আপডেট: ০৪:২৩ পিএম, ৩০ মার্চ ২০২০ সোমবার

বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নেবার পাশাপাশি করোনাভাইরাস প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নানা 'শিক্ষা' দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিল গেটস। তার মতে, এসবের নেপথ্যে পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক কারণ রয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর একান্ত অনুভবগুলো জানা যাক-
* আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, পেশা, আর্থিক অবস্থা, খ্যাতি ইত্যাদির পরও প্রকৃতগতভাবে সবাই সমান। যে যত বড় খ্যাতিমান কিংবা ক্ষমতাবান হোন না কেন- যেকোনো সময় আপনি কঠিন সঙ্কটে পড়তে পারেন। ভাইরাস এই বিষয়টি আমাদের খুব ভালো করেই  বুঝিয়েছে। যদি আপনি বিশ্বাস না করেন- তবে টম হ্যাংকস অথবা প্রিন্স চার্লসকে দেখেই তা বুঝতে পারবেন।

* আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে দারুণভাবে সম্পৃক্ত। জগতের সব কিছুই একটি অনুবন্ধনে আবদ্ধ। সীমান্তরেখাগুলো আসলেই মিথ্যা। এগুলোর মূল্য কত কম তা করোনাভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে। আপনারা ভালো করেই দেখেছেন- সীমান্ত পাড়ি দিতে ভাইরাসের ভিসা, পাসপোর্ট কিছুরই প্রয়োজন হয়না।

* স্বল্প সময়ের জন্য গৃহে আবদ্ধ থাকাটা হয়তো আপনার কাছে নিপীড়ন মনে হচ্ছে। তাহলে একটু ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন- যারা সারা জীবন ধরে এমন নিপীড়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে- তাদের জীবনটা কেমন।

* নিজের স্বাস্থ্যের মূল্য কতটা তা করোনাভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে। অথচ বিষয়টিকে আমরা কত অবহেলা করি। নানা রকমের কেমিক্যালযুক্ত খাদ্য না খেলে আমাদের চলেনা। আমরা যদি আমাদের শরীরের যত্ন না নেই। তবে অবশ্যই আমরা অসুস্থ হবো।

* ভাইরাস বুঝিয়ে দিয়েছে- জীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। যেকোনো সময় জীবনের ইতি হয়ে যেতে পারে। এই সংক্ষিপ্ত জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে বয়স্ক আর শিশুদের বেশি করে যত্ন নেয়া। এদের এক দল পৃথিবী দেখার জন্য আরেক দল পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তাই, এদেরকে বেশি করে সময় দিতে হবে। জীবন বাঁচাতে টয়লেট পেপার কিনে ঘর ভর্তি করাটাই জীবনের উদ্দেশ্য নয়।

* ভাইরাস স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- আমরা কত স্বার্থপর। জড়বাদে বিশ্বাসী, ভোগবাদি আর বিলাসের সমাজই আমরা তৈরি করেছি। সংকটময় মুহুর্তে বোঝা যায়- জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো হচ্ছে- খাদ্য, পানি আর ওষুধ। দামি বাড়ি, গাড়ি আর পাঁচ তারকা রিসোর্ট নয়। এসব একজন মানুষকে বাঁচাতে পারেনা।

* ভাইরাস দেখালো নিজের পরিবার আর আপনজনকে আমরা কতটুকু অবহেলা করি। আমরা যখন নিজ থেকে ঘরে ফিরিনি, আপনজনদের সময় দেইনি; ভাইরাস জোর করেই আমাদের প্রিয়জনদের কাছে ফেরালো। প্রিয়জনদের সঙ্গে নতুন করে দৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করার সুযোগ তৈরি করে দিলো।

* আমাদের আসল কাজ অন্যের চাকর হয়ে শুধু চাকুরি করাই নয়। এই জন্যই আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠানো হয়নি। মানব সৃষ্টির আসল কাজ হলো- মানুষ মানুষের পাশে থাকবে, রক্ষা করবে। তথা মানুষ মানুষের কাছ থেকে উপকৃত হবে।

* ক্ষমতা, খ্যাতি এবং বিত্তের দম্ভ এসব কিছুই নিমিষেই যেকোনো সময় চুপসে যেতে পারে। বড় কোনো শক্তির কাছে নয়, অতি ক্ষুদ্র এক আণুবীক্ষণিক ভাইরাসের কাছে। পুরো দুনিয়াটাকে অচলাবস্থায় নিয়ে যেতে পারে খালি চোখে অদেখা এক ভাইরাস। 
তাই আমাদের সব রকমের দম্ভকে যেন আমরা সবসময় নিয়ন্ত্রণের মাঝেই রাখি। 

* আমাদের ইচ্ছেশক্তির পূর্ণ স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা ভালো না মন্দ হবো, স্বার্থপর না পরার্থপর হবো, ভালোবাসবো না ঘৃণা করবো, সাহায্য করবো না ছিনিয়ে নিবো, দান করবো না গ্রহণ করবো; এসব কিছু করার পূর্ণ স্বাধীনতা সবারই আছে। সঙ্কট আমাদের আসল স্বরুপ বের করে দেয়।

* আমরা সাবধান হবো নাকি শুধুই শঙ্কিত হবো- এটাও ভাইরাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়। এরকম অবস্থা অতীতেও হয়েছে। সুতরাং মনে রাখতে হবে পৃথিবীর কোনো সঙ্কটই দীর্ঘস্থায়ী নয়।

* আমরা যেন নিজেদের শুধরাতে পারি। শিক্ষা নিতে পারি-এটা পৃথিবীর শেষ নয়। বরং এক নতুন পৃথিবী গড়ার সূচনা। 

*  যে হারে দ্রব্য রাখার পাত্র থেকে টয়লেট রোল ফুরিয়ে গেলো। ঠিক একইভাবে আমাদের অক্সিজেন দান করা অরণ্য ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই অরণ্যকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতিকে অসুস্থ করে আমরা কোনোদিনই সুস্থ হতে পারবোনা। প্রকৃতিকে নিজের গৃহ মনে করতে হবে।

* করোনাভাইরাস আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে- আমরা যেন ভুলে না যাই। শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের সংশোধন করি। অনেকেই করোনাভাইরাসকে গ্রেট ডিজেস্টার হিসাবে দেখছেন। আমরা এটাকে আসলে গ্রেট কারেক্টর হিসাবেই দেখতে চাই।