হ্যাটট্রিকের পথে কেজরীবাল, পূর্বাভাস দিল্লির সমীক্ষায়

allbanglanews24.com

প্রকাশিত : ১০:২৭ এএম, ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ রোববার

পরপর তিন বার!


হ্যাটট্রিকের পথে অরবিন্দ কেজরীবাল। অন্তত আজ দিল্লির ৭০টি আসনে ভোটের শেষে সবক’টি বুথ-ফেরত সমীক্ষা জানাচ্ছে, নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফের সরকার গড়তে চলেছে অরবিন্দ কেজরীবালের আম আদমি পার্টি। ২০১৩ সালে প্রথম বার কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে, গত বার একক গরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে তৃতীয় বার ফের ক্ষমতায় আসার ইঙ্গিত দিচ্ছেন কেজরীবাল। শেষবেলায় মেরুকরণের তাস খেলে মরণকামড় দিতে চেয়েও বিশেষ দাঁত ফোটাতে ব্যর্থ বিজেপি। সমীক্ষা জানাচ্ছে, গত বারের মতোই রাজধানীতে আপের সামনে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাওয়ার পথে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দল। দিল্লি-সহ গোটা দেশ জুড়ে যখন নয়া নাগরিকত্ব আইন, জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে পথে নেমেছে আম জনতা— তখন আজকের সমীক্ষার ফল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আপের এক নেতার কথায়, ‘‘হিন্দু-মুসলমান বিভেদের রাজনীতি, মেরুকরণ ছেড়ে মানুষ যে কেজরীবালের কাজকেই বেছে নিয়েছেন, সেটাই বড় পাওনা।’’
বুথ ফেরত সমীক্ষার ফলে উৎসাহিত আপ শিবির। উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া সন্ধ্যায় টুইট করে বলেন, ‘‘আমরা প্রচুর ব্যবধানে জিততে চলেছি। কর্মীদের পরিশ্রমকে ধন্যবাদ।’’ এ দিন সন্ধ্যায় সবক’টি সমীক্ষার ফলই আপকে এগিয়ে রাখায় রীতিমতো উৎসাহের মেজাজ আপ দলীয় কার্যালয়ের সামনে। আপ নেতৃত্বের দাবি, বুথ-ফেরত সমীক্ষায় যে ফল এসেছে, তারচেয়েও বেশি আসন পাবে দল। আপাতত ইভিএম পাহারা নিয়ে সাবধানী কেজরীবালের দল স্ট্রংরুম পাহারায় স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করবে। তবে এটা ঠিক, বুথ-ফেরত সমীক্ষার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সমীক্ষার পূর্বাভাস যেমন প্রকৃত ফলের সঙ্গে মেলার দৃষ্টান্ত রয়েছে, তেমনই বহু ক্ষেত্রে ফল মেলেওনি। তবে অনেকেরই মতে, বুথ-ফেরত সমীক্ষার মাধ্যমে ভোটারদের মনোভাবের অনেকটাই হদিস পাওয়া যায়।
আজ যে ক’টি সমীক্ষা হয়েছে, তার মধ্যে এবিপি নিউজ-সি ভোটারের করা সমীক্ষা আপকে দিয়েছে ৪৯-৬৩টি আসন। রিপাবলিক টিভি-জন কি বাতের সমীক্ষায় আপ পেয়েছে ৪৮-৬১টি আসন। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে ইন্ডিয়া টুডে-অ্যাক্সিস-মাই ইন্ডিয়া। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, মোট ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ৫৯-৬৮টি আসন পেতে চলেছে আপ। প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আই-পিএসি-র মতে, যে ভাবে আজ মুসলিম ও শিখ ভোটারেরা পথে নেমেছিলেন, তার তুলনায় নিরপেক্ষ হিন্দু ভোটাররা বাড়িতেই বসে ছিলেন। ফলে শাহিন বাগ, জামিয়া চত্বর বা পুরনো দিল্লির মতো মুসলিম এলাকাগুলিতে যে দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েছে, তা অনুপস্থিত ছিল অন্যত্র। সব মিলিয়ে রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের দেওয়া হিসেবে ভোট পড়েছে ৬১.৪৬ শতাংশ। গত বারের তুলনায় বেশ কিছুটা কম।
ভোট শতাংশের এই হিসেব নিয়ে চিন্তায় বিজেপিও। বিশেষত এনআরসি-সিএএ নিয়ে যখন বিক্ষোভ চলছে রাজধানীতে। এই পরিস্থিতিতে দিল্লির লড়াই জেতা বিজেপির পক্ষে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দিল্লিতে নির্দিষ্ট কোনও জনজাতির পরিবর্তে গোটা দেশের প্রতিনিধিত্ব উপস্থিত রয়েছে। তাই রাজধানীতে গোটা দেশের সামগ্রিক ছবিটি ফুটে ওঠে।
তাই রাজধানীতে পরাজয় মোটেই স্বস্তির নয় নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জন্য। বিশেষ করে মানুষ যে বিজেপির নীতিকে সমর্থন করছে না, তা অনেকাংশেই প্রমাণ হয়ে যাবে বলে মত বিরোধীদের। দিল্লির বিজেপি সভাপতি মনোজ তিওয়ারি অবশ্য এখনই হার মানতে নারাজ।। তাঁর দাবি, ‘‘মঙ্গলবার সব সমীক্ষাই ভুল প্রমাণিত হবে। বিজেপিই দিল্লিতে সরকার গড়তে চলেছে। তখন যেন বিরোধীরা আবার ইভিএমের দিকে আঙুল না তোলেন।’’
নয় মাস আগে দিল্লির সাতটি লোকসভা আসনেই জিতেছে বিজেপি। শেষ এক মাসে রাজধানীতে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছেন মোদী-অমিত শাহ-যোগী আদিত্যনাথরা। শাহিন বাগকে কেন্দ্র করে প্রবল হাওয়া তোলা হয়েছে মেরুকরণের। তার পরেও বেশ কিছু বুথ ফেরত সমীক্ষায় আসনের হিসেবে দুই অঙ্ক ছুঁতে ব্যর্থ হয়েছে বিজেপি। তবে টাইমস নাও-আইপিএসওএসের সমীক্ষায় সর্বাধিক ২৩টি আসন পেয়েছে বিজেপি। আর রিপাবলিক টিভির মতে ৯-২১টি আসন পেতে পারে বিজেপি। আজ বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল
বেরোতেই দিল্লির সাংসদ ও নেতাদের তড়িঘড়ি দলীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়। সদ্য প্রাক্তন দলীয় সভাপতি অমিত শাহ এ বারে দিল্লি ভোটের পুরো দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, বুথ-ফেরত সমীক্ষার ফল প্রকাশের পরে তড়িঘড়ি বিজেপি দফতরে দলীয় নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন অমিত শাহ। তাতে বর্তমান সভাপতি জে পি নড্ডাও ছিলেন। বিজেপি সূত্রের মতে, দল জেতার অবস্থায় ছিল না এটা যেমন ঠিক, তবে আশা করা হয়েছিল, অন্তত পঁচিশের কাছাকাছি আসন পাবে দল। কিন্তু যে ভাবে অনেক সমীক্ষায় বিজেপির আসনপ্রাপ্তিকে এক অঙ্কের নীচে নামিয়ে আনা হয়েছে, তাতে ক্ষুব্ধ সভাপতি দলীয় নেতাদের কাছে কৈফিয়ৎ দাবি করেন।
বিজেপি তা-ও খাতা খুলতে পেরেছে। আজ অনেক সমীক্ষাতেই কংগ্রেসের প্রাপ্তির ঘর কার্যত শূন্য।


সূত্র:: আনন্দবাজার